Rahul Gandhi: এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া লড়াইয়ে সাফল্য কে পাবে বলা না গেলেও রাহুলের নেতৃত্বকে স্বীকার করে নিল বিজেপি বিরোধীরা, এটাই কংগ্রেসের সাফল্য
সেখ ইবাদুল ইসলাম: পশ্চিমবাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হতে না হতেই দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠলো। দীর্ঘ ১০ বছরের শাসনে মোদি সরকার এদেশের সমস্ত কিছুই পাল্টে দিয়েছে। এমনকি যে মানুষ গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাস করতেন, যে মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাস করতেন তাদের মধ্যে কোথাও না কোথাও ধর্মীয় বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ থেকে ৭৭ বছর আগে জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে এদেশে যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ৬৭ বছর পর সেই রাষ্ট্র যেন ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ থেকে সরে যেতে শুরু করেছে।
একসময় ধর্মীয় চিন্তাভাবনাকে প্রতিক্রিয়াশীল বলে চিহ্নিত করা হতো। আজ এই ধর্মীয় চিন্তাভাবনাকেই প্রগতিশীলতার লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বিগত ১০ বছরে এদেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা তলানিতে ঠেকেছে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়েছে রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে পেট্রোল ডিজেল সমস্ত ক্ষেত্রেই মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে পৌঁছে গেছে দাম। তা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। এখনো দেশের অনেক মানুষ নরেন্দ্র মোদিকেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোথায় যেন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। সংবাদমাধ্যম তার নিজস্ব নীতি আদর্শ থেকে সরে গিয়ে সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। আমরা এতদিন ধরে যে ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলাম মাত্র ১০ বছরের মধ্যে সেই স্বপ্ন অনেকটাই ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ২০২৩ এর জুন এবং জুলাই মাস ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজনৈতিক দলগুলিকে বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থাৎ বিজেপি বিরোধী যে সকল রাজনৈতিক দল আছে,তাদের একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম দেখা গিয়েছিল গত জুন মাসে বিহারের পাটনায়। ১৮ই জুলাই তা দেখা গেল কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে।
পাটনাতে ছিল ১৭টি বিরোধী রাজনৈতিক দল আর বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে এমন কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল উপস্থিত ছিল যারা দেশের দশটি রাজ্যে এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ক্ষমতাসীন। পশ্চিমবাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সরেন, বিহারের নীতিশ কুমার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন এবং কংগ্রেস দল শাসিত চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মোট ১১ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের বিরোধী দলনেতা অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের কৃষক নেতা জয়ন্ত চৌধুরী সিপিএম সিপিআই সহ বাম দলগুলি এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এই বৈঠকের পর জোটের একটি নাম দেয়া হয়েছে ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ এলায়েন্স অর্থাৎ ইন্ডিয়া।
আর এই জোট ঘিরে জাতীয় রাজনীতির সরগরম হয়ে উঠেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি এই জোট ভ্রষ্টাচারদের জোট বলে অভিহিত করেছেন। আর তাতেই আরো বেশি গুরুত্ব পেয়ে গেছে এই ইন্ডিয়া। রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা গেছে ইন্ডিয়া মানে ভারতবর্ষের জনতা। আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়াই হবে INDIA বনাম NDA এর মধ্যে। ইতিমধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এই জোট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আমাদের বক্তব্য হলো এই জোট আদৌ সাফল্য পাবে কি, পাবে না সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো যারা একদিন রাহুল গান্ধীকে পাপ্পু বলেছিলেন, কয়েক মাস আগেও যে নেত্রী বলেছিলেন রাহুল গান্ধী হলেন মোদীর টিআরপি সেই নেত্রী এখন রাহুল গান্ধীকে বলছেন ফেভারিট। এটাই কংগ্রেসের জিত।
পশ্চিমবাংলার সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের মনে হয়তো এটা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এবং সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আসল সত্য হলো তৃণমূল নেত্রীকেও কংগ্রেসকে মান্যতা দিতে হলো। কয়েক মাস আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিজে কংগ্রেস দলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন আজ সেই কংগ্রেসের ডাকে যখন বৈঠকে যোগ দিতে হয় তখন একজন আদর্শবাদী রাজনীতির কাছে বিষয়টি সত্যিই লজ্জার। রাজনীতিতে অবশ্য শেষ কথা বলে কিছু হয় না তবু রাজনৈতিক শিষ্টাচার রাখাটা উচিত ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সেটা তারা রাখতে পারেনি এতদিন।
আমাদের আশঙ্কা, এই জোট খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না লোকসভা নির্বাচনের আগেই কয়েকজন নেতৃত্ব কয়েকটি দল এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা প্রবল ভাবে রয়েছে। তা সত্ত্বেও এটা প্রমাণিত হলো যে কংগ্রেসের নেতৃত্বকে মানতে এরা বাধ্য। সে অখিলেশ যাদব হোক, সে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোক কংগ্রেস ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতে এদের কোন গুরুত্ব নেই। এটা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখনো অনেক সময় বাকি আছে। তৃণমূল নেতৃত্ব যে কংগ্রেসের সঙ্গে এ রাজ্যে জোট করবে সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ যেভাবে নানা দুর্নীতির সঙ্গে তৃণমূল নেতারা জড়িয়ে গেছেন এবং সবকটা দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই এবং ইডি এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রী চাইলেও ইন্ডিয়া জোটের সামিল হতে পারবেন কিনা সেটা এখন হাজার কোটি টাকার প্রশ্ন।
বাংলাকে কংগ্রেস মুক্ত করার শপথ যারা নিয়েছিলেন তারা যখন কংগ্রেসের ডাকে মোদী বিরোধী সভায় উপস্থিত হন তখন তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। উঠেছে। তবে রাহুল গান্ধী যদি রাজনৈতিক স্বার্থেই মমতাকে আমন্ত্রণ করে থাকেন সেটা খুব ভালো। কিন্তু জোটের স্বার্থে তৃণমূল নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ করা হলে তাতে দুই দলেরই কোন উপকার হবে না বরং এই রাজ্যে কমিটেড মুসলিম ভোট এবং কমিটেড কংগ্রেস ভোট হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।